Sunday, June 1, 2025

 

এক্সোপ্ল্যানেটের রহস্যময় পরিবেশ-কল্পনা যখন জ্ঞানের সীমানা অতিক্রম করে যায়

 থার্ড আই গ্রুপ এক্সিবিশনে আমার Exo -প্ল্যানেট  বিষয়ক  পেইন্টিং 


এক্সোপ্ল্যানেট: আমাদের সৌরজগতের বাইরের জগত

এক্সোপ্ল্যানেট বা বহির্গ্রহ হলো এমন গ্রহ যা আমাদের সূর্যের বাইরে অন্য কোনো নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে। ১৯৯০-এর দশকে প্রথম এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কারের পর থেকে, বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত ,০০০-এরও বেশি এক্সোপ্ল্যানেট শনাক্ত করেছেন। এই গ্রহগুলোর মধ্যে কিছু এমন রয়েছে, যেগুলোর পরিবেশ আমাদের পৃথিবীর মতোই বসবাসযোগ্য হতে পারে।

 

K2-18b: মহাসাগরঘেরা এক রহস্যময় জগত


K2-18b নামক এক্সোপ্ল্যানেটটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১২০ আলোকবর্ষ দূরে, লিও নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত। এই গ্রহটি "হাইসিয়ান" (Hycean) ধরনের, যার মানে এটি একটি হাইড্রোজেন-সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল এবং সম্ভাব্যভাবে তরল জলে পূর্ণ একটি পৃষ্ঠ রয়েছে।(1)

২০২৫ সালে, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) K2-18b-এর বায়ুমণ্ডলে মিথেন (CH₄), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂), এবং ডাইমিথাইল সালফাইড (DMS) শনাক্ত করে। DMS পৃথিবীতে মূলত সামুদ্রিক জীব যেমন ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন দ্বারা উৎপন্ন হয়, যা জীবনের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয় (2)

তবে, বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন যে, এই গ্যাসগুলোর উপস্থিতি জীবনের প্রমাণ নয় বরং একটি সম্ভাবনা মাত্র। আরও গবেষণা পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন এই দাবিকে নিশ্চিত করার জন্য।

LHS 1140 b: ভবিষ্যতের মহাজাগতিক রিসোর্ট?



LHS 1140 b নামক আরেকটি এক্সোপ্ল্যানেট, যা পৃথিবী থেকে ৪১ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, একটি সুপার-আর্থ ধরনের গ্রহ। এই গ্রহটির পৃষ্ঠে তরল জল এবং ২০°C তাপমাত্রার সমুদ্র থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে এর বায়ুমণ্ডল নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।(2)

যদিও বর্তমান প্রযুক্তিতে এই গ্রহে পৌঁছানো সম্ভব নয়, তবে ভবিষ্যতে এটি মহাজাগতিক পর্যটনের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে।

HD 20794 d: আমাদের সৌরজগতের প্রতিবেশী


HD 20794 d একটি সুপার-আর্থ ধরনের এক্সোপ্ল্যানেট, যা মাত্র ২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই গ্রহটি একটি সূর্য-সদৃশ নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে এবং এর কক্ষপথ "গোল্ডিলকস জোন" বা বাসযোগ্য অঞ্চলের মধ্যে পড়ে, যেখানে তরল জল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে (4)

যদিও এর কক্ষপথ কিছুটা বিচিত্র, যা মাঝে মাঝে বাসযোগ্য অঞ্চলের বাইরে চলে যায়, তবে এটি ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হতে পারে।

ভবিষ্যতের দিগন্ত

প্রতিটি নতুন এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করে: আমরা কি একা? K2-18b-এর বায়ুমণ্ডলে জীবনের সম্ভাব্য চিহ্ন, LHS 1140 b-এর সমুদ্রসমৃদ্ধ পরিবেশ, এবং HD 20794 d-এর বাসযোগ্য কক্ষপথএই সবই আমাদের কল্পনাকে উসকে দেয়।

যদিও এই গ্রহগুলিতে বাস্তবিকভাবে পৌঁছানো এখনো সম্ভব নয়, তবে বিজ্ঞান প্রযুক্তির অগ্রগতির মাধ্যমে একদিন হয়তো আমরা এই রহস্যময় জগতগুলো সম্পর্কে আরও জানতে পারব।

এইসব এক্সোপ্ল্যানেটের পরিবেশ আমাদের কল্পনাকে উসকে দেয় এবং ভবিষ্যতের গবেষণার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। আমরা যদি একদিন এই গ্রহগুলিতে পৌঁছাতে পারি, তবে হয়তো সেখানে জীবনের নতুন রূপ আবিষ্কার করতে পারব।

© আরিফ আহমদ, পরিচালক DIU Astrophysics Center

 

Friday, May 16, 2025

 

আমি যখন জিজ্ঞেস করি: "তুমি কী হতে চাও?" — ওরা বলে, "স্যার, থ্রিডি অ্যানিমেটর!"

✍️ অরিফ আহমেদ

এই প্রশ্নটা আমি বহুবার শুনেছি —
“স্যার, থ্রিডি অ্যানিমেশন শিখতে চাই। কোন সফটওয়্যারটা শিখব?”

প্রথম প্রথম উত্তরে আমি এক লাইন বলতাম, “Maya শিখো।”
কিন্তু এখন আর বলি না। এখন আমি আগে কিছু প্রশ্ন করি।
তুমি কী ধরনের কাজ করতে চাও? গেম বানাতে? সিনেমার মতো অ্যানিমেশন করতে?
না কি নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এনিমেটেড গল্প বলবে?

কারণ, সফটওয়্যার হচ্ছে গন্তব্য নয় — এটা হচ্ছে রাস্তা। আর প্রত্যেকটা রাস্তা তোমাকে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়।


Maya – পেশাদার অ্যানিমেটরের প্রথম প্রেম

আমার যাত্রাটা শুরু হয়েছিল 3ds Max দিয়ে, কিন্তু পেশাদার অ্যানিমেটর হিসেবে Maya আমাকে নতুন এক জগতে নিয়ে গিয়েছিল।
যেখানে ক্যারেক্টার রিগিং, লিপ সিনক, ওয়াক সাইকেল — এগুলো শুধু টুল না, যেন প্রাণ হয়ে ওঠে।

Maya শেখাটা সহজ নয়, কিন্তু একবার যখন হাতের জোর তৈরি হয় — তখন মনে হয়, "এই তো, আমি পারি।"

Maya হলো সেই সফটওয়্যার যেটা দিয়ে Disney, Pixar, DreamWorks-এর মতো স্টুডিওগুলো কাজ করে।
তুমি যদি স্বপ্ন দেখো বড় কিছু করার — তাহলে Maya শেখাই উচিত।


3ds Max – ডিজাইনারদের জন্য সোজা পথ

যারা প্রোডাক্ট ডিজাইন, ইন্টেরিয়র বা আর্কিটেকচার ভিজুয়ালাইজেশন করতে চায়, তাদের জন্য 3ds Max যেন নির্ভরতার আরেক নাম।
এটা আমার প্রথম সফটওয়্যার ছিল। আমি আজও মনে করি, এটা নতুনদের জন্য অনেকটা বন্ধুর মতো।
ইন্টারফেস সহজ, রেন্ডারিং শক্তিশালী — বিশেষ করে V-Ray এর সঙ্গে একত্রে কাজ করলে।


Blender – বিনা খরচে বড় স্বপ্ন

আজকের দিনে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছেলেমেয়েরা যেটা নিয়ে — সেটা হলো Blender।
সম্পূর্ণ ফ্রি, ওপেন সোর্স, অথচ শক্তিশালী।
নিজের চেষ্টায় যারা শিখতে চায়, ইউটিউবে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে পারে — তাদের জন্য Blender স্বপ্নের দরজা খুলে দেয়।

Blender দিয়েই অনেক বিশ্বমানের কাজ এখন হচ্ছে।
যারা ফ্রিল্যান্স করতে চায়, কিংবা নিজস্ব কনটেন্ট বানাতে চায় — তাদের জন্য এটা আদর্শ।


Houdini – জাদুকরের মতো সফটওয়্যার

যখনই আমি দেখি কোনো সিনেমায় ধ্বংস, বিস্ফোরণ, সাগরের ঢেউ বা ধোঁয়ার জাদু — তখন বুঝি, এর পেছনে আছে Houdini।
এটা শেখা কঠিন, কিন্তু পারলে আপনি এমন কিছু তৈরি করতে পারবেন যা অন্য সফটওয়্যারে সম্ভব নয়।

এই সফটওয়্যারটায় আমি নিজেও এখনো শিখছি। এটা এক জীবনের সফর।


Cinema 4D – মোশন গ্রাফিক্সের জগতে এক আলো ঝলমলে নাম

অনেকেই আছেন যারা After Effects-এর সঙ্গে কাজ করেন, চ্যানেল ব্র্যান্ডিং, মোশন গ্রাফিক্সের কাজ করেন।
তাদের জন্য Cinema 4D এক কথায় স্বপ্ন।
Adobe-এর ইকোসিস্টেমের সঙ্গে এত সুন্দরভাবে মিশে যায় যে মনে হয়, ওরা একে অপরের জন্যই বানানো।


শেষ কথা

তোমার সফটওয়্যার বেছে নাও তোমার স্বপ্ন দেখে, তোমার আগ্রহ দেখে।
কেউ Blender দিয়ে বিশ্বমানের কাজ করে, কেউ Maya শিখেও মাঝপথে থেমে যায়।
মূল কথা — সফটওয়্যার তোমার হাতিয়ার, কিন্তু যুদ্ধটা তোমার মনের।

আমি আজও প্রতিদিন শিখি। কারণ শেখা বন্ধ করলে শিল্পী হিসেবে আমি থেমে যাবো।
তোমরা যারা শুরু করছ, মনে রেখো — এটা শুধু সফটওয়্যার শেখার গল্প না, এটা নিজের ভেতরের একজন ‘কাহিনীকার’ খুঁজে পাওয়ার যাত্রা।


তুমি যদি সত্যি জানতে চাও কোনটা তোমার জন্য, নিজের ভেতরের প্রশ্নগুলো আগে করো — তুমি কী করতে চাও?
তাহলেই উত্তরটা তুমি নিজেই খুঁজে পাবে।

©আরিফ আহমদ


Thursday, May 15, 2025

 


 থ্রিডি অ্যানিমেটর হবার গল্প

.....................................
আমার এক ছাত্র ছিল, নাম সাগর। একটু গম্ভীর ধরনের ছেলে। তার চেহারায় সবসময় এক ধরনের চিন্তার ছায়া দেখা যেত। আমি একদিন তাকে বললাম, "তোমার মুখ এত চিন্তিত কেন?"
সে জবাব দিল, “স্যার, আমি থ্রিডি অ্যানিমেটর হতে চাই। কিন্তু জানি না কিভাবে শুরু করবো।”
আমি হেসে বললাম, “তোমার মনে যদি দৃঢ়তা থাকে, তাহলে রাস্তা তো একদিন ঠিকই খুলে যাবে। তবে, পথটা একটু জাদুবিদ্যার মতো।”
তারপর আমি তাকে যা বলেছিলাম, সেটাই এখানে তোমাদের বলছি।
ধাপ ১: ড্রয়িং শেখো, চোখ খুলে দেখো
যতই থ্রিডি বলো, শুরুটা কিন্তু টু-ডি দিয়েই। হাতে যদি স্কেচের শক্তি না থাকে, তাহলে ক্যারেক্টার বানাবে কীভাবে?
সাগরকে বলেছিলাম, “প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট স্কেচ করো। মানুষের মুখ, গাছ, টেবিল, এমনকি তোমার বিড়ালটাকেও।”
একজন ভালো অ্যানিমেটর হতে হলে চোখে দেখতে হবে গভীরভাবে, আর কল্পনায় তার বাইরের জগৎ বানাতে হবে।
ধাপ ২: বেসিক সফটওয়্যার শেখা
থ্রিডি অ্যানিমেশন কোনো যাদুকাঠির কাজ নয়, তবে সফটওয়্যারগুলো কিছুটা যাদুর মতই।
প্রথমেই যে সফটওয়্যারগুলোর সাথে পরিচিত হতে হবে, তা হলো:
• Autodesk Maya – এইটা যেন থ্রিডির রাজা। ক্যারেক্টার মডেলিং, রিগিং, অ্যানিমেশন – সব কিছুতেই ব্যবহার হয়।
• 3ds Max – Maya’র চাচাতো ভাই। বিশেষ করে আর্কিটেকচার ও ভিজ্যুয়ালাইজেশনের কাজে বেশ ব্যবহৃত হয়।
• Blender – এইটা ফ্রি, ওপেন সোর্স, কিন্তু অসাধারণ শক্তিশালী। যারা নতুন, তাদের জন্য এটা এক আদর্শ শুরু।
আমি সাগরকে বলেছিলাম, “প্রথমে একটি সফটওয়্যার বেছে নাও, এবং সেটাকে বন্ধু বানাও। দিনের পর দিন একে চেনো, বুঝো, শিখো।”
ধাপ ৩: মডেলিং, টেক্সচারিং, রিগিং... এই নামগুলো মুখস্থ করো
থ্রিডি অ্যানিমেশন শুধু ক্যারেক্টার নাচানো নয়। এর পেছনে রয়েছে অনেক ধাপ:
• Modeling – তুমিই ভাস্কর। তুমি গড়বে অবজেক্ট, ক্যারেক্টার, পরিবেশ।
• Texturing – গায়ে রঙ লাগাবে। ত্বকের চামড়া, কাপড়ের ভাঁজ – সব এখানে।
• Rigging – হাড় বসাবে। যাতে ক্যারেক্টার নড়াচড়া করতে পারে।
• Animation – এখন সে হাঁটবে, হাসবে, দৌড়াবে।
• Lighting & Rendering – শেষের কাজ। সব কিছু আলোর নিচে এনে, ছবির মতো করে তোলা।
ধাপ ৪: স্টোরিটেলিং শেখো
সফটওয়্যার জানাই যথেষ্ট নয়। গল্প বলতে না জানলে অ্যানিমেশন প্রাণ পাবে না।
আমি বলেছিলাম, “সাগর, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল পড়ো। সিনেমা দেখো। মানুষের অভিব্যক্তি বোঝো। কারণ অ্যানিমেশন মানে জীবনের অনুকরণ।”
ধাপ ৫: ডেমো রিল বানাও, আর অনলাইনে নিজেকে তুলে ধরো
যখন হাতের কাজ একটু ভালো হয়ে যাবে, তখন একটা ছোট ডেমো রিল তৈরি করো – মানে, নিজের করা সেরা অ্যানিমেশনগুলোর এক ঝলক।
এই ডেমো রিলই তোমার সিভি। Behance, ArtStation, LinkedIn – সবখানে এটা দাও।
ধাপ ৬: নেটওয়ার্ক গড়ো, শেখার মন রেখো
শুধু ঘরে বসে শেখা নয়। অনলাইন কমিউনিটিতে যুক্ত হও, ফোরামে প্রশ্ন করো, কোর্স করো।
সাগর একদিন বলল, “স্যার, ইউটিউবেই তো একেকজন মাস্টার!”
আমি বললাম, “ঠিক বলেছো। শেখার উৎস এখন সবার হাতের মুঠোয়।”
সাগর এখন একটি স্টুডিওতে কাজ করে, মাঝে মাঝে নিজের ইউটিউব চ্যানেলেও টিউটোরিয়াল দেয়।
সে এখনো মাঝে মাঝে বলে, “স্যার, আপনি যদি না বলতেন ‘জাদুবিদ্যা শিখতে চাইলে প্রতিদিন একটু করে জাদু করতে হবে’, তাহলে হয়তো আমি শুরুই করতাম না।”
উপসংহার:
থ্রিডি অ্যানিমেটর হতে চাইলে:
• দেখতে শিখো
• সফটওয়্যার আয়ত্তে আনো
• ধৈর্য রাখো
• গল্প বলার ক্ষমতা গড়ে তোলো
আর মনে রেখো – শুরুতেই সব জানার দরকার নেই, শুরু করাটাই সবচেয়ে জরুরি।

©আরিফ আহমদ

Tuesday, May 13, 2025

 3D Loop Animation Technique-Butterfly Animation

In this tutorial I will show the technique of creating butterfly animation.




Sunday, May 11, 2025

 


আবেগ নিয়ন্ত্রণের কিছু মায়াবী কৌশল

আবেগ জিনিসটা অদ্ভুত। কখনও তা নদীর মতো শান্ত, কখনও আবার পাহাড়ি ঝর্ণার মতো উন্মাতাল। মানুষ আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, সেই আবেগই তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর তখনই ঘটে বিপত্তি।

১. নিঃশ্বাসে লুকিয়ে থাকে শান্তি

একবার চেষ্টা করে দেখুন—চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিন। তারপর ঠিক তেমনি ধীরে ছেড়ে দিন। এই ছোট্ট কাজটা যদি প্রতিদিন দু’-একবার করেন, দেখবেন—রাগ, দুঃখ কিংবা অস্থিরতা ধীরে ধীরে গলিয়ে যাচ্ছে। মনে হবে, ভেতরের অগ্নিকুণ্ডে যেন বরফ ফেলা হয়েছে।

২. নিজেকে একটু বিরতি দিন

কেউ কিছু বললেই চট করে উত্তর দেবেন না। একটা কাপ চায়ের মতো নিজেকে একটু বসতে দিন। ভেতরের আবেগগুলোকে থিতু হতে দিন। অনেক সময় দেখা যায়, কিছু না বলাটাই সবচেয়ে বড় জয়।

৩. ভাবনার খাতা খুলে ফেলুন

যা মনে আসে, লিখে ফেলুন। রাগ, দুঃখ, আনন্দ—সব। কাগজের ওপর আবেগগুলো ঝরে পড়লে মনে হবে, বুকটা হালকা হয়ে গেছে। লেখার মধ্যে এক ধরনের নিরাময় আছে—যা মুখে বলা যায় না, তা কলমে বলা যায়।

৪. মনে করিয়ে দিন—সবই ক্ষণস্থায়ী

রাগ হোক বা কষ্ট—সবই চলে যায়। সূর্য যেমন অস্ত যায়, আবার ওঠেও। নিজেকে বারবার বলুন—“এটাও কেটে যাবে।” এই সহজ বাক্যটাই ভেতরের ঝড়কে শান্ত করতে পারে।

৫. ঘনিষ্ঠ কাউকে বলুন

মন খুলে কথা বলুন এমন একজন মানুষ থাকুক—বন্ধু, সঙ্গী, মা, কিংবা খালাতো ভাই। কাঁধে মাথা রেখে বলুন—“ভালো লাগছে না।” অনেক সময় কেবল বলাটাই মন ভালো করে দেয়।

৬. শরীরকে সচল রাখুন

হাঁটুন। ছাদে, পার্কে কিংবা নিজ ঘরের এক কোণে। শরীর চললে, মনও হালকা হয়। আবেগ জমে থাকলে তা বেরিয়ে যায় ঘামের সঙ্গে।

৭. সংগীতের আশ্রয় নিন

স্নিগ্ধ সুরে ভেসে যেতে দিন নিজেকে। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি কিংবা প্রিয় কোনো গান শুনুন। হৃদয়কে স্পর্শ করে এমন সুরে অনেক সময় অশান্ত মন শান্ত হয়ে যায়।


মানুষ তো যন্ত্র নয়—আবেগ থাকবে, অশ্রুও ঝরবে। তবে সেই আবেগকে যদি একটু যত্ন করে আলোর পথে হাঁটানো যায়, তাহলে জীবনটা অনেকটাই সুন্দর হয়ে ওঠে।

চেষ্টা করে দেখুন। নিজেকে ভালোবাসার এটাই একরকম উপায়।

©আরিফ আহমদ


Friday, May 9, 2025

 Breathing Exercise-Anulom Vilom Pranayama





বয়সের সঙ্গে ফুসফুসের ক্ষমতা—একটি নীরব পতন





 নিশ্বাসের আয়ু কী শুধু বয়সের উপর নির্ভর করে? বয়স পঞ্চাশ পেরোলেই কি ফুসফুসের ক্ষমতা ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসে? বাস্তবতা বলছে, হ্যাঁ—এটা একেবারে স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তবে আশার কথা এই, এই ক্ষয়রোধ করা সম্ভব, আবার কিছুটা উল্টেও দেওয়া যায়, যদি আপনি ঠিক সময়ে সঠিক কিছু পদক্ষেপ নেন।


🌬️ বয়সের সঙ্গে ফুসফুসের ক্ষমতা—একটি নীরব পতন

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ফুসফুস তার পূর্বের মতো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে না। ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সে যেখানে ফুসফুসের ক্ষমতা সর্বোচ্চ থাকে, সেখানে ৫০ পার হওয়ার পর প্রতি বছর গড়ে ৩০–৫০ মিলিলিটার করে কমতে থাকে।

একটি আমেরিকান গবেষণা বলছে—

  • ৫০ বছর বয়সে একজন মানুষের ফুসফুসের ক্ষমতা কমে আসে প্রায় ১০–১৫%

  • ৭০ বছরে এসে এই ক্ষয় পৌঁছায় প্রায় ৩০–৪০% এ।

এই পতনের প্রধান কারণগুলো হলো—

  • ফুসফুসের ভেতরের আলভিওলি বা বায়ুকোষগুলো ধীরে ধীরে তাদের স্থিতিস্থাপকতা হারায়।

  • শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে জড়িত পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে।

  • বক্ষপাঁজর কঠিন হয়ে যায়, বুকের ভেতর জায়গা সংকুচিত হয়।


🛡️ এই পতন কি ঠেকানো যায়?

হ্যাঁ, আশার আলো এখানেই। বয়স বাড়লেও সঠিক জীবনধারা মেনে চললে ফুসফুসের এই দুর্বলতা ধীর করা যায়, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে উল্টে দেওয়া সম্ভব। দেখে নেওয়া যাক কীভাবে:

১. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম

হাঁটা, সাঁতার, সাইক্লিং বা হালকা দৌড় ফুসফুসকে সচল রাখে। এতে অক্সিজেন গ্রহণ ও রক্তে তার পরিবহন দক্ষতা বাড়ে।

২. শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম

প্রতিদিন ডায়াফ্রাগমেটিক ব্রিদিংপার্সড-লিপ ব্রিদিং করলে ফুসফুসের নিচের অংশও সক্রিয় থাকে। ফুসফুসের স্থিতিস্থাপকতা অনেক দিন অক্ষুণ্ণ রাখা যায়।

৩. ধূমপান বন্ধ

ধূমপান ফুসফুসের সবচেয়ে বড় শত্রু। একজন ধূমপায়ী প্রতি বছর প্রায় ৬০–৯০ মিলি ফুসফুসের ক্ষমতা হারান—একজন ধূমপান না করা মানুষের তুলনায় দ্বিগুণ হারে।

৪. ভালো খাদ্যাভ্যাস

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার যেমন: আপেল, পালং শাক, বাদাম, হলুদ ইত্যাদি ফুসফুসের কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয়।

৫. মনোযোগী মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম

নিয়মিত ধ্যান ও যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমিয়ে ফুসফুসের ওপর বাড়তি চাপ কমায়। শ্বাসের গভীরতা বাড়ায়।


📊 বয়স অনুযায়ী lung capacity-এর গ্রাফ (সাধারণত):

বয়স ফুসফুসের গড় ক্ষমতা (শতকরা হার)
২৫ ১০০%
৫০ ৮৫–৯০%
৬০ ৭৫–৮০%
৭০+ ৬০–৭০%
৮০+ ৫০–৬০%

🌟 শেষ কথায় আশার গল্প

বয়স কখনোই শেষের চিহ্ন নয়—বিশেষত যদি আপনি নিজেকে একটু সময় দেন, ফুসফুসকে সচল রাখতে চেষ্টা করেন। নিয়মিত ব্যায়াম, বিশুদ্ধ বাতাস, সঠিক খাওয়া ও গভীর শ্বাস—এই চারটি হাতিয়ার আপনার নিঃশ্বাসকে ফিরিয়ে দিতে পারে তার যৌবনের স্পন্দন।

©আরিফ আহমদ



Sunday, February 28, 2021

Speed painting-Ideal place of Relaxation Part-2


 

Speed painting-ideal place of relaxation part-2

RealFlow 10 introductory Bangla Tutorial part-2



RealFlow 10 Introductory Bangla Tutorial Part-2