থ্রিডি অ্যানিমেটর হবার গল্প
.....................................
আমার এক ছাত্র ছিল, নাম সাগর। একটু গম্ভীর ধরনের ছেলে। তার চেহারায় সবসময় এক ধরনের চিন্তার ছায়া দেখা যেত। আমি একদিন তাকে বললাম, "তোমার মুখ এত চিন্তিত কেন?"
সে জবাব দিল, “স্যার, আমি থ্রিডি অ্যানিমেটর হতে চাই। কিন্তু জানি না কিভাবে শুরু করবো।”
আমি হেসে বললাম, “তোমার মনে যদি দৃঢ়তা থাকে, তাহলে রাস্তা তো একদিন ঠিকই খুলে যাবে। তবে, পথটা একটু জাদুবিদ্যার মতো।”
তারপর আমি তাকে যা বলেছিলাম, সেটাই এখানে তোমাদের বলছি।
ধাপ ১: ড্রয়িং শেখো, চোখ খুলে দেখো
যতই থ্রিডি বলো, শুরুটা কিন্তু টু-ডি দিয়েই। হাতে যদি স্কেচের শক্তি না থাকে, তাহলে ক্যারেক্টার বানাবে কীভাবে?
সাগরকে বলেছিলাম, “প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট স্কেচ করো। মানুষের মুখ, গাছ, টেবিল, এমনকি তোমার বিড়ালটাকেও।”
একজন ভালো অ্যানিমেটর হতে হলে চোখে দেখতে হবে গভীরভাবে, আর কল্পনায় তার বাইরের জগৎ বানাতে হবে।
ধাপ ২: বেসিক সফটওয়্যার শেখা
থ্রিডি অ্যানিমেশন কোনো যাদুকাঠির কাজ নয়, তবে সফটওয়্যারগুলো কিছুটা যাদুর মতই।
প্রথমেই যে সফটওয়্যারগুলোর সাথে পরিচিত হতে হবে, তা হলো:
• Autodesk Maya – এইটা যেন থ্রিডির রাজা। ক্যারেক্টার মডেলিং, রিগিং, অ্যানিমেশন – সব কিছুতেই ব্যবহার হয়।
• 3ds Max – Maya’র চাচাতো ভাই। বিশেষ করে আর্কিটেকচার ও ভিজ্যুয়ালাইজেশনের কাজে বেশ ব্যবহৃত হয়।
• Blender – এইটা ফ্রি, ওপেন সোর্স, কিন্তু অসাধারণ শক্তিশালী। যারা নতুন, তাদের জন্য এটা এক আদর্শ শুরু।
আমি সাগরকে বলেছিলাম, “প্রথমে একটি সফটওয়্যার বেছে নাও, এবং সেটাকে বন্ধু বানাও। দিনের পর দিন একে চেনো, বুঝো, শিখো।”
ধাপ ৩: মডেলিং, টেক্সচারিং, রিগিং... এই নামগুলো মুখস্থ করো
থ্রিডি অ্যানিমেশন শুধু ক্যারেক্টার নাচানো নয়। এর পেছনে রয়েছে অনেক ধাপ:
• Modeling – তুমিই ভাস্কর। তুমি গড়বে অবজেক্ট, ক্যারেক্টার, পরিবেশ।
• Texturing – গায়ে রঙ লাগাবে। ত্বকের চামড়া, কাপড়ের ভাঁজ – সব এখানে।
• Rigging – হাড় বসাবে। যাতে ক্যারেক্টার নড়াচড়া করতে পারে।
• Animation – এখন সে হাঁটবে, হাসবে, দৌড়াবে।
• Lighting & Rendering – শেষের কাজ। সব কিছু আলোর নিচে এনে, ছবির মতো করে তোলা।
ধাপ ৪: স্টোরিটেলিং শেখো
সফটওয়্যার জানাই যথেষ্ট নয়। গল্প বলতে না জানলে অ্যানিমেশন প্রাণ পাবে না।
আমি বলেছিলাম, “সাগর, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল পড়ো। সিনেমা দেখো। মানুষের অভিব্যক্তি বোঝো। কারণ অ্যানিমেশন মানে জীবনের অনুকরণ।”
ধাপ ৫: ডেমো রিল বানাও, আর অনলাইনে নিজেকে তুলে ধরো
যখন হাতের কাজ একটু ভালো হয়ে যাবে, তখন একটা ছোট ডেমো রিল তৈরি করো – মানে, নিজের করা সেরা অ্যানিমেশনগুলোর এক ঝলক।
এই ডেমো রিলই তোমার সিভি। Behance, ArtStation, LinkedIn – সবখানে এটা দাও।
ধাপ ৬: নেটওয়ার্ক গড়ো, শেখার মন রেখো
শুধু ঘরে বসে শেখা নয়। অনলাইন কমিউনিটিতে যুক্ত হও, ফোরামে প্রশ্ন করো, কোর্স করো।
সাগর একদিন বলল, “স্যার, ইউটিউবেই তো একেকজন মাস্টার!”
আমি বললাম, “ঠিক বলেছো। শেখার উৎস এখন সবার হাতের মুঠোয়।”
সাগর এখন একটি স্টুডিওতে কাজ করে, মাঝে মাঝে নিজের ইউটিউব চ্যানেলেও টিউটোরিয়াল দেয়।
সে এখনো মাঝে মাঝে বলে, “স্যার, আপনি যদি না বলতেন ‘জাদুবিদ্যা শিখতে চাইলে প্রতিদিন একটু করে জাদু করতে হবে’, তাহলে হয়তো আমি শুরুই করতাম না।”
উপসংহার:
থ্রিডি অ্যানিমেটর হতে চাইলে:
• দেখতে শিখো
• সফটওয়্যার আয়ত্তে আনো
• ধৈর্য রাখো
• গল্প বলার ক্ষমতা গড়ে তোলো
আর মনে রেখো – শুরুতেই সব জানার দরকার নেই, শুরু করাটাই সবচেয়ে জরুরি।
©আরিফ আহমদ
1 comment:
খুব ভালো লিখেছেন স্যার , অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম।
Post a Comment